অস্বস্তি কাটছে না বাজারে
সবজির বাজার থেকে বাঁচানো টাকা যাচ্ছে চালে
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৭-১২-২০২৪ ০৬:০৯:৪৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৭-১২-২০২৪ ০৬:০৯:৪৯ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র : ফোকাস বাংলা নিউজ
শীতের ভরা মৌসুমে সবজির বাজারে প্রত্যাশার বেশি স্বস্তি মিলছে। তবে সেই স্বস্তি বিরক্তিতে রূপ নিচ্ছে চালের বাজারে। কম টাকায় সবজি কিনে নগরবাসী যে কয় টাকা বাঁচাতে পারছেন, সেই টাকা বাড়তি খরচ হয়ে যাচ্ছে চালের বাজারে৷ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। অন্যান্য মুরগি ও গরু-খাশির দাম অনেকটা স্থিতিশীল অবস্থাতেই আছে। ব্রয়লারের পাশাপাশি স্বস্তির খবর নেই মাছের বাজারেও। মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের সেই বাড়তি দামেই। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে এবং ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য মিলেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের হাতের নাগালে রয়েছে প্রায় সব সবজি। ফলে সবজির বাজারে ব্যাগ ভর্তি বাজার করা যাচ্ছে তিন থেকে চারশো টাকায়। তবে চালের বাজারে যেতেই বিরক্ত হচ্ছেন ক্রেতারা। বাজারে নতুন চাল আসার পরেও বাড়তি দাম। এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে সাধারণ ক্রেতাদের।
মমিনুর রহমান নামে একজন ক্রেতা বলেন, 'নতুন চাল আসছে প্রায় দুই মাস। এখনো চালের দাম কমার নাম নাই৷ উল্টো দাম বাড়তেছে। গত সপ্তাহে আটাশ চাল কিনছি ৬০ টাকায়৷ এখন ৬২-৬৩ টাকা। কেজিতে ২, ৩ টাকা কিন্তু কম না। বস্তায় ১০০-১৫০ টাকা।' একই অভিযোগ মরিয়ম বেগমের। কম আয়ের এই নারীর খাদ্যাভাসে জায়গা করে নিয়েছে মোটা চাল। তবে সেখানেও অস্বস্তি৷ ৫৮ টাকার পাইজাম চাল কিনতে হয়েছে ৬০ টাকা কেজি দরে৷ তিনি বলেন, 'আমগো কাছে এক কেজি চাউলে দুই টাকাও অনেক। সরকার এগুলা দেখে না ক্যান?'
বাজার ঘুরে দেখা যায়, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৬ টাকা কেজি দরে। যা দুই সপ্তাহ আগেও ছিলো ৬৫ টাকা। আটাশ চাল দুই সপ্তাহ আগে ছিলো ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। যা এখন ৬২ থেকে ৬৩ টাকা। মোটা চালের মধ্যে পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গুটি চাল ৫৫ টাকা। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২-৩ টাকা হারে বেশি। আর কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে নাজিরশাইল এ সপ্তাহে ৮০ টাকা। হাইব্রিড ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোপা আমনের ভরা মৌসুমে দেশের অন্যতম ধান উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁয় গত কয়েক দিনে সরু ও মোটা চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে সরু ও মোটা চাল প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। তবে ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী বলছেন, ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রাজধানীসহ সারা দেশে। কৃষি অধিদফতর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রোপা আমনের এই ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, বন্যায় কয়েকটি জেলায় ধানের ক্ষতি ও বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় চাল আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
সবজির বাজারে স্বস্তি
কিছু দিন আগেও বাজারে সবজির দাম ছিল চড়া। তবে এখন সেই অবস্থা থেকে শীতের ছোঁয়ায় কিছুটা শীতল হয়েছে সবজির বাজার। মৌসুম না হওয়ায় দুই একটি সবজির বাড়তি দাম যাচ্ছে এখনো। বাকি সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজির দামের এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজারে প্রতি পিস ফুল কপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, বাঁধা কপির পিসও ৩০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, গোল বেগুন ৬০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, পেঁপের কেজি ৪০ টাকা, পাকা টমেটো ৬০ টাকা, কাঁচা টমেটোর কেজি ৪০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পটল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁয়াজের ফুল প্রতি আঁটি ১০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, শিম (বিচিওয়ালা) প্রতি কেজি ৬০ টাকা, শিম (সাধারণ) কেজি ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, নতুন আলু ৫০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মহাখালী বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আজকে বাজারে অন্যান্য জিনিসের তুলনায় সবজির দাম কিছুটা কম দেখতে পেলাম। দুই সপ্তাহ আগেও যেসব সবজির দাম বেশি ছিল সেই সবজিগুলোর দাম এখন কিছুটা কমেছে। সবজির দামের বিষয়ে মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, মোটামুটি সব সবজির দামই আগের চেয়ে কমেছে। বরবটি, পটল, করলার এখন মৌসুম না হওয়ায় এগুলো ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাকি সব সবজির দাম আগের চেয়ে অনেক কম। কম দামে সবজি কিনে ক্রেতারা স্বস্তি পাচ্ছেন, আমাদের বিক্রির পরিমাণও আগের চেয়ে বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে সবজির যে দাম চলছে তার চেয়েও আরও কম দাম কারওয়ান বাজারে। এখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা কিনে সেটা পরিবহন খরচ, দোকান খরচ, লেবার খরচ ধরে পরে নতুন করে সবজির দাম নির্ধারণ করছে। যে কারণে তুলনামূলক কিছুটা বেশি দাম রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে।
বেড়েছে ব্রয়লারের দাম
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বাজারে এটি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। তবে অন্যান্য মুরগি ও গরু-খাশির দাম অনেকটা স্থিতিশীল অবস্থাতেই আছে। বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি খাসির মাংস ১০৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়াও প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায় এবং প্রতি কেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়।
মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, বাজারে মুরগির চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে। সে তুলনায় দামটা কমই বলা যায়। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লারের দামটা কিছুটা বেড়েছে। সম্ভবত শীতের কারণে বেড়েছে। এই সময়ে শীতে কিছু মুরগি মরে যায় এবং রোগবালাইও বেশি হয়। যে কারণে খামারি পর্যায়েই বেশি দামে কিনে আনতে হয়। তবুও আলহামদুলিল্লাহ, ভালো বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস বিক্রেতা শান্ত ইসলাম বলেন, এখন খামারিরা গরু কম ছাড়ছে। সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে তারা গরু তৈরি করছে। যে কারণে এখন যেগুলোও বিক্রি হচ্ছে দাম তুলনামূলক একটু বেশি দামে। তাই মাংসের বাজারেও তার প্রভাবটা পড়েছে। গরুর মাংস মোটামুটি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকার মধ্যেই আটকে আছে। আর কমবে বলে মনে হয় না।
মাছের বাজারে নেই হিমশিম ক্রেতা
ব্রয়লারের পাশাপাশি স্বস্তির খবর নেই মাছের বাজারেও। মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের সেই বাড়তি দামেই। এই অবস্থায় বাজারে ক্রেতাদের অসন্তোষ থাকলেও বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় মাছ-মাংসে বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি বড় রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ছোট ও মাঝারি আকৃতির রুই ৩০০ টাকার কিছু কম-বেশি, কাতল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
এদিকে অস্থির ইলিশের বাজারও। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩২০০ টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২ হাজার টাকা দরে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৪০০ টাকা ও ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুণতে হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। মাহমুদা খানম নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে এমনিতেই সব জিনিসের দাম বেশি। এরমধ্যে নতুন করে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। মাছের দামও গত সপ্তাহের তুলনায় বাড়তি মনে হলো। যার যখন ইচ্ছে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কেউ বাজার মনিটরিং করে বলে মনে হয় না। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের ইলিশ বিক্রেতা মো. শুকুর আলী বলেন, ইলিশ কম ধরা পড়ছে। এতে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। দিন দিন ইলিশের দাম ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে কমছে বিক্রিও।
বাংলা স্কুপ/ প্রতিবেদক/ এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স